পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে-শহরে মানুষের মধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সিপিএম আমলের শেষদিকে সিপিএমের বিরুদ্ধে যেরকম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল, অনেকটা সেরকমই।
অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ এবং বহু মধ্যবিত্ত মানুষ তৃণমূলের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সরাসরি শিকার হয়েছেন। স্বভাবত, তৃণমূলকেই তাঁরা সবচেয়ে বড়ো শত্রু হিসেবে দেখছেন।
পশ্চিমবঙ্গে কোনওদিন বিজেপির শাসন ছিল না। তাই আরএসএস-বিজেপির হিন্দুত্ব ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাস এই রাজ্যের মানুষ কখনও সামনাসামনি প্রত্যক্ষ করেননি। তাই হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের ভয়ঙ্কর রূপ সম্বন্ধে তাদের সম্যক ধারণা ও উপলব্ধি নেই।
অধিকাংশ সাধারণ মানুষ সারাদিন নিজেদের রুটি-রুজির সন্ধানে ব্যাস্ত থাকেন। তাই টিভি বা খবরের কাগজ খুলে, উত্তর প্রদেশে বা গুজরাটে বিজেপি সরকার কী সন্ত্রাস চালাচ্ছে বা আদানি কী ভাবে দেশের সম্পদ লুঠ করছে, তা জানা বা বোঝার অবকাশ তাঁদের নেই।
তাঁদের চোখের সামনে বা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তাঁরা যা দেখছেন সেটাই তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড়ো :বাস্তব'।
আর সেই 'বাস্তবে' তৃণমূলই সবচেয়ে বড়ো শয়তান।
বহু ক্ষেত্রে স্থানীয় ভাবে বিজেপির অনেক কর্মী তৃণমূল নেতাদের এইসব দুর্নীতি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, লড়াই করছেন, আক্রান্তও হচ্ছেন।
ফলে সাধারণ মানুষের একটা সহমর্মিতা ও সমর্থনও বিজেপি পাচ্ছে।
যেমন সাম্প্রতিক সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের ডি.এ. আন্দোলনের মধ্যে স্পষ্টতই বিজেপি ঘেঁষা এক বা একাধিক নেতা ব্যপক সমর্থন পাচ্ছেন।
যারা সক্রিয় ভাবে বিকল্প বাম রাজনীতি করেন, তাঁরা দেশ-বিদেশের খবরাখবর রাখেন। তাঁদের রাজনৈতিক চেতনাও যথেষ্ট।
তাই তাঁরা সহজেই বুঝতে পারেন যে স্বৈরাচারী তৃণমূল যত খারাপই হোক না কেন, বিজেপির মতো একটা ফ্যাসিস্ট শক্তির কাছে তৃণমূল শিশু।
কিন্তু অধিকাংশ সাধারণ মানুষের তো সেই রাজনৈতিক অনুশীলন নেই। সেই রাজনৈতিক চেতনাও নেই। তাই তাঁরা আরএসএস-বিজেপির বিপদ সম্যক বুঝতে পারছেন না।
সেই কারণেই মানুষকে ধৈর্য ধরে আরএসএস-বিজেপির হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের বিপদ বোঝাতে হবে।
কেন জনগণ বিজেপির বিপদ বুঝতে পারছেন না সেই নিয়ে হা-হুতাশ করলে হবে না। কেউ বিজেপির পক্ষে কোনও কথা বললেই তাঁকে সাম্প্রদায়িক বা 'চাড্ডি' বলে দেগে দিয়ে আক্রমণ করাটা কোনও কাজের কথা নয়। এতে শেষ অবধি হাতে পেন্সিল, কী-বোর্ড বা মোবাইল ছাড়া আর কিছুই পড়ে থাকবে না।
সেই সঙ্গে তৃণমূলের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অপশাসনের বিরুদ্ধে সমানভাবে সোচ্চার হতে হবে। লড়াই চালাতে হবে।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে নীরব থেকে, শুধুমাত্র আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার চালালে মানুষ তা গ্রহণ করবেন না। বরং তৃণমূলের দালাল হিসেবেই চিহ্নিত করবেন।
যেরকম তৃতীয় ধারার কিছু মানুষজনের তৈরী কিছু 'ফ্যাসিবাদ-বিরোধী' সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। যারা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সক্রিয় হয়েছিলেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি না করে শুধুমাত্র আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে গিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গে ফ্যাসিবাদী আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে স্বৈরাচারী তৃণমূলের বিরুদ্ধেও সমান্তরাল ভাবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
এ ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই।
Comments
Post a Comment