Skip to main content

কলকাতা শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থা কি ধ্বংসের মুখে ? -- (১)

দ্বিতীয়বারের জন্য দীর্ঘ লকডাউনের শেষে সরকার নিদান দিয়েছেন, বেসরকারী বাস পথে নামাতে ।  কিন্তু ভাড়া বৃদ্ধি না হলে বাস নামানো সম্ভব নয় বলে জেদ ধরে বসে আছেন বাস-মালিকেরা ।  মাঝখান থেকে জনগণের প্রাণ ওষ্ঠাগত । 
কিন্তু গণপরিবহনের এই সমস্যা একদিনে তৈরী হয়নি ।  কোভিড জনিত লকডাউনই এর একমাত্র  বা মূল কারণ নয় । গত বেশ কয়েক বছর ধরেই,  সরকারী উদাসীনতার কারণে, কলকাতা শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থা ধুঁকতে ধুঁকতে ক্রমশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে । 
বামফ্রন্ট আমলের শেষদিক থেকেই বিভিন্ন সরকারী বাস রুট বন্ধ হয়ে যেতে থাকে । যে সব রুট চালু ছিল সেখানেও বাসের সংখ্যা কমে যায় , পরিষেবা অনিয়মিত হয়ে পড়ে । 
পরবর্তীকালে তৃণমূল আমলে JNNURM  প্রকল্পের টাকায় বেশ কিছু সরকারী বাস নামানো হয় ।  কিন্তু তার অধিকাংশই এয়ার কন্ডিশনড বাস । ভাড়া সাধারণ বাসের থেকে বেশ কয়েকগুণ বেশী ।  স্বভাবতই নিম্নবিত্ত  ও নিম্নমধ্যবিত্ত  মানুষ সেই বাসে চড়তে পারেন  না । 
অন্যদিকে বেসরকারী বাস ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই চরম অব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে চলছে ।  আমরা অনেকেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি যে বাস-মালিকরা বলেন ,  বাস চালিয়ে নাকি তাঁদের  কোনো লাভ হয়না । নিজেদের ঘর থেকে টাকা দিয়ে লোকসানে বাস চালাতে হয় ।  তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে তাঁদের কাছে কী সাত রাজার ধন আছে যে এত বছর ধরে,  গৌরি সেন হয়ে,  লোকসানে বাস চালানোর  পরেও তাঁরা  কপর্দকহীন হয়ে যাননি । 
যখনই ডিজেলের দাম বেড়েছে তখনই বাসের ভাড়া বেড়েছে । কিন্তু পরে  ডিজেলের দাম কমলেও ভাড়া আর কমেনি । 
JNNURM প্রকল্পে  প্রায় ১২০০ বাস বেসরকারী মালিকদের ঋণের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছিল  চালানোর জন্য ।  কিন্তু সেগুলি নাকি এতই উন্নত প্রযুক্তির বাস যে  রক্ষণাবেক্ষণের প্রচুর খরচ চালিয়ে EMI  দিতে পারেননি অধিকাংশ মালিক ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন পরিবহন নিগম ফ্র‍্যাঞ্চাইসি পদ্ধতির মাধ্যমে বাস চালানোর চেষ্টা করেছে । তবে কয়েকটি লাভজনক রুট ছাড়া তাতে বিশেষ সফলতা আসেনি । 
পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নত দেশে শহরের মধ্যেকার বাস পরিবহন ব্যবস্থা ( Intra-city bus transport )   সরাসরি সরকারের দ্বারা বা সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত  Not for Profit সংস্থার দ্বারাই চলে । অনেক জায়গায় তো Zero Fare বা বিনামূল্যে পরিষেবাও চালু আছে।  কারণ বেসরকারীকরণ  হলে মালিকদের  মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য অনেক বেশী ভাড়া নিতে হবে ।  শহরের মধ্যে পরিবহন ব্যবহারকারীরা অধিকাংশই নিত্যযাত্রী ।  ফলে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হলে  যাত্রীদের  ওপর প্রবল আর্থিক চাপ পড়ে যাবে । 
শহরের অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থা, প্রায় পুরোটাই, বেসরকারী হাতে চলে গেলে কী ভয়ঙ্কর অবস্থা হতে পারে তা কলকাতার মানুষ ভালোই উপলব্ধি করতে পারছেন ! 
শুধু যাত্রীরাই নন ৷ বেসরকারী পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা ( ড্রাইভার,  কন্ডাকটর,  হেল্পার ইত্যাদি ) দীর্ঘদিন রোজগার বন্ধ থাকায় চিরম আর্থিক কষ্ট ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন ।  কয়েকদিন আগেই ঢাকুরিয়া ব্রিজের নীচে ৩৭ নম্বর বাস স্ট্যান্ডে দীর্ঘদিন বসে যাওয়া একটি বাসের মধ্যে থেকে এক বাসকর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে ।  
সরকার ও বেসরকারী বাস মালিকদের মধ্যে দরকষাকষি চলছেই ।  হয়ত ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে সাময়িক একটা সুরাহা হবে ।  তবে কলকাতা শহরের পরিবহন ব্যবস্থার খোলনলচে না বদলালে অদূর ভবিষ্যতেই পরিবহন ব্যবস্থা  ( বিশেষ করে বাস পরিবহন ) ভেঙে পড়ার আশংকা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে । 


Comments

Popular posts from this blog

ন্যায্য দাবীতে আন্দোলনরত বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আক্রমণকে ধিক্কার

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আওয়ামী লীগের যে ভূমিকা ছিল, তার থেকে অনেক বেশী ভূমিকা ছিল পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি , পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি(এম-এল)'এর মত বিপ্লবী দলগুলোর । এমনকি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) প্রথমে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতা করলেও পরে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল । এইসব বিপ্লবী দলগুলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ লড়াই করেছিল । বরিশাল, পাবনা, যশোর সহ আরও নানা জায়গার যুদ্ধ তার প্রমাণ।  এই কমিউনিস্ট বিপ্লবী সংগঠনগুলোর লড়াইয়ের ফলেই স্বাধীন, নয়াগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্ম হত। হয়ত কয়েক বছর দেরী হত।   দক্ষিণ এশিয়ায় সাচ্চা কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনায় ভীত হয়েই সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, তার দালাল ভারতীয় সম্প্রসারণবাদকে ব্যবহার করে, আওয়ামী লীগকে সামনে রেখে পূর্ব বাংলার তথাকথিত এই 'স্বাধীনতা'র জন্ম দেয় । 'বাংলাদেশ' নামটার ও জন্ম হয় । আসলে বিপ্লবীরা  স্বাধীন 'পূর্ব বাংলা' রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করেছিলেন। তার বদলে এল আধা-ঔপনিবেশিক বাংলাদেশ।   তার পরেই এল মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে চর...

আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস দীর্ঘজীবী হোক

আজ আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস।  আজকের দিনে বহুক্ষেত্রেই উত্তর-আধুনিক দর্শন এবং তা থেকে উদ্ভুত আইডেন্টিটি পলিটিক্স নারী আন্দোলনের ওপর ব্যপক প্রভাব বিস্তার করেছে।  শ্রেণী সংগ্রাম তথা সর্বহারার বিপ্লবের সঙ্গেই যে নারী মুক্তি সংগ্রাম অঙ্গাঙ্গী ভাবে সম্পৃক্ত তা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।  বুর্জোয়া ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ তথা সুবিধাবাদকে প্রতিষ্ঠা করাই অনেক ক্ষেত্রে নারী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক তথাকথিত বা স্বঘোষিত বিপ্লবী নারী সংগঠন  বা ব্যক্তিও এই বিচ্যুতি থেকে মুক্ত হতে পারেননি।  নারী আন্দোলন মানে হলো নারী এবং পুরুষের দ্বন্দ্ব । এরকম হাস্যকর, ভ্রান্ত, অনৈতিহাসিক  চেতনাও অনেকের মধ্যে গেঁড়ে বসেছে।  এই রকম পরিস্থিতিতে কমরেড ক্লারা জেটকিনের জীবন ও শিক্ষাকে গভীরভাবে অনুধাবন করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ।  কমিউনিস্টরা নারী মুক্তি আন্দোলন বলতে যা বোঝেন, তার সঙ্গে তথাকথিত নারীবাদ নামক বিভিন্ন ধারার আন্দোলনের মধ্যে যে শ্রেণীচরিত্রগত পার্থক্য আছে তা উপলব্ধি করতে হবে।  এমনকি 'সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ' বা 'মার্কসবাদী নারীবাদ...

ফ্যাসিস্ট বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলকে ছাড় দেওয়া যাবে না

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে-শহরে মানুষের মধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।  সিপিএম আমলের শেষদিকে সিপিএমের বিরুদ্ধে যেরকম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল,  অনেকটা সেরকমই।  অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ এবং বহু মধ্যবিত্ত মানুষ তৃণমূলের  দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সরাসরি শিকার হয়েছেন।  স্বভাবত, তৃণমূলকেই তাঁরা সবচেয়ে বড়ো শত্রু হিসেবে দেখছেন।  পশ্চিমবঙ্গে কোনওদিন বিজেপির শাসন ছিল না।  তাই আরএসএস-বিজেপির হিন্দুত্ব ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাস এই রাজ্যের মানুষ কখনও সামনাসামনি প্রত্যক্ষ করেননি।  তাই হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের ভয়ঙ্কর রূপ সম্বন্ধে তাদের সম্যক ধারণা ও উপলব্ধি নেই।  অধিকাংশ সাধারণ মানুষ সারাদিন নিজেদের রুটি-রুজির সন্ধানে ব্যাস্ত থাকেন। তাই টিভি বা খবরের কাগজ খুলে, উত্তর প্রদেশে বা গুজরাটে বিজেপি সরকার কী সন্ত্রাস চালাচ্ছে বা আদানি কী ভাবে দেশের সম্পদ লুঠ করছে, তা জানা বা বোঝার অবকাশ তাঁদের নেই।   তাঁদের চোখের সামনে বা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তাঁরা যা দেখছেন সেটাই তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড়ো :বাস্তব'।  আর সেই 'বাস্তবে' তৃণমূলই সবচেয়ে বড়ো শয়তান।  বহু ক্ষেত...