মুষ্টিমেয় কয়েকটি প্রচার মাধ্যমে খুব ছোট আকারে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের অধীনস্থ 'ডিরেক্টোরেট ওফ ড্রাগ কন্ট্রোল'-এর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গেছে যে রাজ্যের বহু হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের দোকান বা ফেয়ার প্রাইস মেডিসিন স্টোরের বহু ওষুধ নির্দিষ্ট গুণমানের মাপকাঠি পেরোতে পারেনি ।
এর মধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো রাজ্যের সেরা ও ঐতিহ্যবাহী হাসপাতালও আছে । এছাড়াও কার্শিয়াং, কালিম্পং থেকে শুরু করে বর্ধমান, ডায়মন্ড হারবার সহ নানা জায়গার হাসপাতাল ও সরকারী ড্রাগ স্টোর আছে । এই ড্রাগ স্টোরগুলি থেকেই হাসপাতালের ভিতরে বিনামূল্যে ব্যবহারের ওষুধ সরবরাহ হয় ।
অনেক বড়ো খবরের ভিড়ে এই খবর হারিয়ে গেলেও জনস্বাস্থের জায়গা থেকে এটি অত্যন্ত চিন্তাজনক ব্যাপার।
২০১২-র শেষদিক থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে এই ন্যায্য মূল্যের দোকানগুলি চালু হতে শুরু করে । যে ওষুধগুলি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে না , সেগুলি যাতে রোগীর আত্মীয়রা কম খরচে কিনতে পারেন , সেই উদ্দ্যেশ্যেই এই দোকানগুলি শুরু করা হয় ।
এগুলিতে মূলত জেনেরিক নামে ওষুধ পাওয়া যায় । ব্র্যান্ডেড না হওয়ার কারণে এই ওষুধ অনেক কম দামে পাওয়া যায় ।
শুরু থেকেই এই দোকানগুলিকে নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল । অনেকেই বলেছিলেন, যে মূল্যে এই দোকান থেকে ওষুধ বিক্রী হয়, তার থেকে কম দামে বাজার থেকেই এই জেনেরিক ওষুধ কেনা যায় । অর্থাৎ , গ্রাহকদের হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে ওষুধ কিনে সাশ্রয় হচ্ছে না ।
দ্বিতীয়ত ঃ যদি ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে অধিকাংশ ওষুধ বিক্রী শুরু হয় তাহলে হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে পাওয়া ওষুধের সংখ্যা ও পরিমান কমে যেতে পারে ।
এছাড়াও ন্যায্য মূল্যের দোকানে বিক্রী হওয়া ওষুধের গুণমান নিয়েও কানাঘুষো প্রশ্ন উঠেছিল । কিন্তু কোনও প্রমাণ ছিল না । এখন খোদ সরকারী সংস্থার রিপোর্টেই নিম্নমানের ওষুধ বিক্রীর ঈঙ্গিত মিলেছে ।
এর ফলে দুটি গুরুতর সমস্যার উদ্ভব হয়েছে ।
এক, এতদিন ধরে নিম্নমানের ওষুধ দেওয়ার ফলে অসংখ্য সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় ত্রুটি রয়ে গেছে । বহু মানুষের অসুখ হয়ত পুরোপুরি সারেনি বা সঠিক সময়ে সারেনি । অনেককে হয়ত একাধিক ওষুধ দিতে হয়েছে সঠিক ফল পাওয়ার জন্য । বা একই ওষুধ অনেক বেশীদিন ধরে দিতে হয়েছে । ফলে অনেকের হয়ত নানারকম শারীরিক সমস্যারও উদ্ভব ঘটেছে, এই নিম্নমানের ওষুধ খেয়ে ।
দুই , এর ফলে সাধারণ মানুষের মনে সামগ্রিকভাবে সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কেই নেতিবাচক ধারণার জন্ম হবে । ইতিমধ্যেই বহু মানুষের মধ্যে সেই ধারণা কমবেশি আছে । তাঁরা ঘটিবাটি বিক্রী করে হলেও বেসরকারী হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার দিকে ঝুঁকবেন ।
তার ওপর এখন কোভিডের টীকাকরণ চলছে । টীকা নিয়ে কিছু মানুষের মনে অযৌক্তিক ভীতি আছে এখনও । তাঁদের সেই ভীতি জোরদার হবে । তাঁরা ভাববেন , সরকারী ন্যায্য মূল্যের দোকানে যদি নিম্নমানের ওষুধ দেওয়া হয়, তাহলে সরকার থেকে বিনামূল্যে দেওয়া কোভিডের টীকাও তো খারাপ হতে পারে । ক্ষতিকর হতে পারে ।
গত দশ বছর ধরেই পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নের ঢক্কানিনাদ চলছে । স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল নাকি ফিরে গেছে , জনগণ নাকি সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে উচ্চমানের চিকিৎসা পেতে পারেন।
আসলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে কী বেহাল দশা তা এই রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট ।
Comments
Post a Comment