২০০৬ থেকে ২০১১ সাল অবধি পশ্চিমবঙ্গে যেরকম একটা টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল আজ যেন আবার , সীমিতভাবে হলেও, তারই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে ।
সেই সময়ও সিপিএম নেতৃত্বাধীন তথাকথিত 'বামফ্রন্ট' বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ছিল । কিন্তু জনগণের একটা ব্যপক অংশের মধ্যেই ছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ । যা সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, লালগড়, রিজয়ানুর রহমানের মৃত্যুর প্রতিবাদে আন্দোলন সহ আরও নানা আন্দোলনের মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয়েছিল । এখনও দেউচা পাঁচামি থেকে আনিস খানের হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলন - সব জায়গায় একই রকমের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে চলেছে ।
তখন ক্যাডার-বাহিনী , হার্মাদ-বাহিনী'কে ব্যবহার করে, সন্ত্রাস করে, সিপিএমকে নিজের সংসদীয় ক্ষমতা ধরে রাখতে হচ্ছিল । এখনও দেখা যাচ্ছে পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা - সব জায়গায় তৃণমূলী ভৈরব-বাহিনীর রিগিং এবং সন্ত্রাস ।
সেদিনও আমরা দেখেছিলাম , বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত একদল দালাল এবং সিপিএমের থেকে নানারকম সুবিধা পেয়ে ফুলেফেঁপে ওঠা কিছু মধ্যবিত্ত মানুষ কী নির্লজ্জভাবে সিপিএমের গণহত্যার পক্ষে সাফাই দিয়ে যেত । আজও দেখতে পাচ্ছি, অন্যান্য নানা বিষয়ে অতিরিক্ত সরব কিছু বুদ্ধিজীবী তৃণমূলের সমস্ত অপকর্ম দেখেও হিরন্ময় নীরবতা পালন করছে ।
আর সেইসময়কার মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর ঔদ্ধত্য এবং দম্ভের মধ্যে যে মিল পাওয়া যায়, সেটা তো বলাই বাহুল্য ।
তখনও আমরা দেখেছিলাম যে রাজনৈতিক কর্মীদের একটা অংশ মনে করছে, সিপিএমকে সরিয়ে তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে । এখনও একদল মনে করেন তৃণমূলকে সরিয়ে বিজেপিকে আনলে বা সিপিএম তথা 'বামফ্রন্ট'কে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।
সেদিনও কিছু মানুষ 'বামপন্থাকে বাঁচানোর' নাম করে সিপিএমের পক্ষ নিয়েছিলেন । আজও কিছু মানুষ 'ফ্যাসিবাদকে আটকানোর' নাম করে তৃণমূলকে সুবিধা করে দিচ্ছেন ।
দুই সময়কালের মধ্যে কী অদ্ভুত মিল !!
সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, লালগড় সহ বহু আন্দোলন, সামাজিক ফ্যাসিবাদী ও সন্ত্রাসবাদী সিপিএমকে ক্ষমতা থেকে সরানোর মধ্য দিয়ে সীমিতভাবে সফল হয়েছিল ঠিকই কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোনও গুণগত বদল আনতে পারেনি । যদিও বিপ্লবীরা এই আন্দোলনগুলোতে অংশগ্রহণ করে এগুলোকে একটা বিপ্লবী দিশায় পরিচালিত করার চেষ্টা করেছিলেন এবং কিছুটা পরিমাণে সফলও হয়েছিলেন । বিশেষ করে নন্দীগ্রামে এবং আরও বেশী করে লালগড়ে । যদিও নানা কারণে তা পুরোপুরি সফল হয়নি ।
আজ আমরা একইরকম একটা যুগসন্ধিক্ষণে অবস্থান করছি । অন্তত এই রাজ্যের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ।
আজকের এইসব গণবিক্ষোভ , গণআন্দোলনকে কি আমরা সমাজের গুণগত পরিবর্তনের পথে নিয়ে যেতে পারবো ? নাকি গতবারের মতই সংসদীয়, ভোটবাজ দলগুলো ফায়দা লুটে নিয়ে জনগণের সাথে বেইমানি করবে ?
পশ্চিমবঙ্গের সব রাজনৈতিক ও গণআন্দোলনের কর্মীদের সামনে এটাই আজ এক জলন্ত প্রশ্ন ।।
সঠিক মূল্যায়ন। পরিবর্তন আনার গুণগত জায়গায় জোর দেওয়া টা জরুরি। এবং কাজটা শুরু করাটা ও জরুরি। আপনাদের এই অবস্থান কে ও তা জরি রাখা কে অভিনন্দন।
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDelete