ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের জোট সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার একটা অংশের নেতারা এবারে পাঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন । যদিও সংযুক্ত কৃষক মোর্চার সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন বিকেইউ(একতা-উগ্রাহন) সহ বিকেইউ (ক্রান্তিকারি) ইত্যাদি অনেক সংগঠনই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিরোধিতা করেছিলেন ।
'সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা'র নাম ব্যবহার করে ভোটে লড়া যাবে না বলে জানিয়েছিলেন তারা । তাই বলবীর সিং রাজেওয়ালের নেতৃত্বে ভোটপন্থী নেতারা 'সংযুক্ত সমাজ মোর্চা' নাম নিয়ে লড়েছিলেন । পাঞ্জাব বিধানসভার মোট ১১৭টির প্রত্যেকটিতেই তাঁরা লড়েছিলেন ।
নির্বাচনের ফল বের হওয়ার পর দেখা গেল 'সংযুক্ত সমাজ মোর্চা' ১১৭টি আসনের প্রত্যেকটিতেই শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছে । এমনকি তাদের মূল নেতা বলবীর সিং রাজেওয়াল নিজে ৪ শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছেন । আরেক নেতা প্রেম সং ভাঙ্গু ২ শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছেন ।
লক্ষ লক্ষ কৃষক দিল্লীতে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন । ভারতবর্ষে এবং ভারতের বাইরেও কোটি কোটি মানুষ এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছিলেন ।
সাম্রাজ্যবাদ এবং দেশীয় মুৎসুদ্দি আমলাতান্ত্রিক পুঁজির বিরুদ্ধে কৃষক জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল এই আন্দোলন।ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিরোধ ছিল এই আন্দোলন ।
তাই এই আন্দোলনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী ফায়দা লোটার প্রয়াসকে মানুষ ভালো চোখে দেখেননি । ভোটপন্থী নেতাদের শোচনীয় পরাজয় সেই ঈঙ্গিতকেই স্পষ্ট করে ।
এর আগেও এদেশে অনেক বড় বড় আন্দোলনের ক্ষেত্রে এই জিনিস দেখা গেছে। আন্দোলনের সফলতায় উদ্দীপ্ত হয়ে অনেকেই ভেবেছেন যে ভোটে দাঁড়ালে এই জনপ্রিয়তাকে সম্বল করে কিছু আসন জেতা যাবে বা হয়ত সরকারি ক্ষমতায় যাওয়া যেতে পারে ।
মূলত সংসদীয় ব্যবস্থার প্রতি মোহ থেকে অনেক সৎ নেতা বা সংগঠনও নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন । তাঁরা হয়ত ভাবেন যে সংসদীয় ক্ষমতায় গিয়ে আন্দোলনের দাবিদাওয়াকে আরও পুর্ণাঙ্গভাবে অর্জন করা যাবে ।
কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা বিফল হয়েছেন । শ্রমিক, কৃষকদের নিয়ে বিশাল বিশাল জমায়েত করা এক বিষয় , আর সেই সমর্থনকে ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত করা আরেক বিষয় । আন্দোলনের শক্তিবৃদ্ধি করাটা জনগণের হাতে আছে । কিন্তু নির্বাচনে কে জিতবে তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা একমাত্র শাসক শ্রেণীর হাতেই আছে ।
এই ধরণের কাজের ফলে আন্দোলনের ক্ষতি হয় । আন্দোলনের গ্রহনযোগ্যতা কমে যায় । এরপর এই ধরণের আন্দোলনকে সমর্থন করার আগে সাধারণ মানুষ সন্দিহান থাকবেন যে তাদের এই সমর্থন এবং সক্রিয়তাকে কেউ কেউ সংসদীয় সিঁড়ি বেয়ে ওঠার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন কিনা ।
কৃষক আন্দোলনের অধিকাংশ সংগঠন এবং নেতা, যাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি, তারা এই বিষয়টি ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন । তাই ভোটে তাঁরা 'সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা'র নামটি ব্যবহার করতে দেননি । সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, তাঁরা ১৪ মার্চ সংযুক্ত কৃষক মোর্চার বৈঠক ডেকেছেন । মোর্চার মধ্যে ভোটে অংশগ্রহণকারী নেতাদের ভবিষ্যত কী হবে তা নির্ধারণ করার জন্য ।
Comments
Post a Comment