Skip to main content

আমেরিকায় নারী অধিকারের ওপর মারাত্মক আঘাত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্ট, ৫০ বছর আগের  বিখ্যাত মামলা Roe vs Wade--এ  দেওয়া  নিজের রায়, আজ নিজেই রদ করে দিয়েছে।
এর ফলে নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের ওপর একটা বড় আঘাত নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে ।  এবার থেকে আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য নিজেদের ইচ্ছেমতো Abortion Law বা গর্ভপাত আইন তৈরী করতে পারবে। 
দক্ষিণপন্থী রিপাবলিকান পার্টি শাসিত ,  রক্ষণশীল রাজ্যগুলি ক্রিশ্চিয়ান ধর্মীয় মৌলবাদীদের তুষ্ট করার জন্য গর্ভপাতের ওপর নানা বাধানিষেধ এনে নারীদের নিজেদের শরীরের ওপর অধিকারকে খর্ব করবে বলে আশঙ্কা ।   এমনকি গর্ভপাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধও হয়ে যেতে পারে অনেক রাজ্যে । 
Roe vs Wade যতদিন ছিল, ততদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল গভর্নমেন্ট  বা সমগ্র দেশের সরকারই একমাত্র গর্ভপাত নিয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারতো।  তার জোরেই এতদিন অবধি গর্ভপাতের অধিকার সুরক্ষিত ছিল । 

সারা পৃথিবী জুড়েই মানব সভ্যতা আজ পিছনের দিকে হাঁটছে ।  বিভিন্ন ধর্মের,  বিভিন্ন রঙ-এর ধর্মীয় মৌলবাদীরা সক্রিয় হয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার , গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আঘাত নামিয়ে আনছে। 
আফঘানিস্থানের মত পিছিয়ে পড়া,  সামন্ততান্ত্রিক দেশে শুধু নয়,  তথাকথিত সভ্যতার পীঠস্থান,  ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বর্গ আমেরিকাতেও আজ মানবাধিকার,  গণতান্ত্রিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত । 
বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক দেশে যে সীমিত বুর্জোয়া স্বাধীনতাটুকুও মানুষ ভোগ করতেন,  তাও আজ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলিতে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুধু নয়,  গর্জন শোনা যাচ্ছে। 
ভারতবর্ষের হিন্দুত্ত্ব ফ্যাসিবাদীরাও এ বিষয়ে পিছিয়ে নেই।  পোষাক,  খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে নারী-পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক - সবই এখন নির্ধারিত করে দেবে মৌলবাদের ধ্বজাধারীরা ।  সব দেশের সমাজেই পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রবল মাত্রায় উপস্থিত থাকার কারণে নারীদের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনা তুলনামূলকভাবে  সহজ । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, জনগণের সংগ্রামের,  নারী অধিকারের জন্য সংগ্রামের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে বলে ওখানে হয়তো কড়া প্রতিরোধ হবে ।  ভারতের সমাজে ব্যক্তি অধিকারের ধারণা দুর্বল বলে এখানে এই বিষয়ে প্রতিরোধও কম হচ্ছে ।  
অবিলম্বে সকল গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল মানুষকে,সামগ্রিক ভাবে জনগণের সব অংশের ব্যক্তি অধিকার রক্ষায় এবং বিশেষ ভাবে  নারীদের ব্যক্তি অধিকার  রক্ষার সংগ্রামে সক্রিয় হতে হবে। 
কারণ আজ যদি অন্য কারও ব্যক্তি অধিকার হনন করা হয়,  তবে আগামীকাল আমার ব্যক্তি অধিকারও হনন করা হতে পারে । 

Comments

Popular posts from this blog

ন্যায্য দাবীতে আন্দোলনরত বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আক্রমণকে ধিক্কার

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আওয়ামী লীগের যে ভূমিকা ছিল, তার থেকে অনেক বেশী ভূমিকা ছিল পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি , পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি(এম-এল)'এর মত বিপ্লবী দলগুলোর । এমনকি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) প্রথমে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতা করলেও পরে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল । এইসব বিপ্লবী দলগুলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ লড়াই করেছিল । বরিশাল, পাবনা, যশোর সহ আরও নানা জায়গার যুদ্ধ তার প্রমাণ।  এই কমিউনিস্ট বিপ্লবী সংগঠনগুলোর লড়াইয়ের ফলেই স্বাধীন, নয়াগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্ম হত। হয়ত কয়েক বছর দেরী হত।   দক্ষিণ এশিয়ায় সাচ্চা কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনায় ভীত হয়েই সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, তার দালাল ভারতীয় সম্প্রসারণবাদকে ব্যবহার করে, আওয়ামী লীগকে সামনে রেখে পূর্ব বাংলার তথাকথিত এই 'স্বাধীনতা'র জন্ম দেয় । 'বাংলাদেশ' নামটার ও জন্ম হয় । আসলে বিপ্লবীরা  স্বাধীন 'পূর্ব বাংলা' রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করেছিলেন। তার বদলে এল আধা-ঔপনিবেশিক বাংলাদেশ।   তার পরেই এল মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে চর...

আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস দীর্ঘজীবী হোক

আজ আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস।  আজকের দিনে বহুক্ষেত্রেই উত্তর-আধুনিক দর্শন এবং তা থেকে উদ্ভুত আইডেন্টিটি পলিটিক্স নারী আন্দোলনের ওপর ব্যপক প্রভাব বিস্তার করেছে।  শ্রেণী সংগ্রাম তথা সর্বহারার বিপ্লবের সঙ্গেই যে নারী মুক্তি সংগ্রাম অঙ্গাঙ্গী ভাবে সম্পৃক্ত তা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।  বুর্জোয়া ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ তথা সুবিধাবাদকে প্রতিষ্ঠা করাই অনেক ক্ষেত্রে নারী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক তথাকথিত বা স্বঘোষিত বিপ্লবী নারী সংগঠন  বা ব্যক্তিও এই বিচ্যুতি থেকে মুক্ত হতে পারেননি।  নারী আন্দোলন মানে হলো নারী এবং পুরুষের দ্বন্দ্ব । এরকম হাস্যকর, ভ্রান্ত, অনৈতিহাসিক  চেতনাও অনেকের মধ্যে গেঁড়ে বসেছে।  এই রকম পরিস্থিতিতে কমরেড ক্লারা জেটকিনের জীবন ও শিক্ষাকে গভীরভাবে অনুধাবন করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ।  কমিউনিস্টরা নারী মুক্তি আন্দোলন বলতে যা বোঝেন, তার সঙ্গে তথাকথিত নারীবাদ নামক বিভিন্ন ধারার আন্দোলনের মধ্যে যে শ্রেণীচরিত্রগত পার্থক্য আছে তা উপলব্ধি করতে হবে।  এমনকি 'সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ' বা 'মার্কসবাদী নারীবাদ...

ফ্যাসিস্ট বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলকে ছাড় দেওয়া যাবে না

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে-শহরে মানুষের মধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।  সিপিএম আমলের শেষদিকে সিপিএমের বিরুদ্ধে যেরকম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল,  অনেকটা সেরকমই।  অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ এবং বহু মধ্যবিত্ত মানুষ তৃণমূলের  দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সরাসরি শিকার হয়েছেন।  স্বভাবত, তৃণমূলকেই তাঁরা সবচেয়ে বড়ো শত্রু হিসেবে দেখছেন।  পশ্চিমবঙ্গে কোনওদিন বিজেপির শাসন ছিল না।  তাই আরএসএস-বিজেপির হিন্দুত্ব ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাস এই রাজ্যের মানুষ কখনও সামনাসামনি প্রত্যক্ষ করেননি।  তাই হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের ভয়ঙ্কর রূপ সম্বন্ধে তাদের সম্যক ধারণা ও উপলব্ধি নেই।  অধিকাংশ সাধারণ মানুষ সারাদিন নিজেদের রুটি-রুজির সন্ধানে ব্যাস্ত থাকেন। তাই টিভি বা খবরের কাগজ খুলে, উত্তর প্রদেশে বা গুজরাটে বিজেপি সরকার কী সন্ত্রাস চালাচ্ছে বা আদানি কী ভাবে দেশের সম্পদ লুঠ করছে, তা জানা বা বোঝার অবকাশ তাঁদের নেই।   তাঁদের চোখের সামনে বা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তাঁরা যা দেখছেন সেটাই তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড়ো :বাস্তব'।  আর সেই 'বাস্তবে' তৃণমূলই সবচেয়ে বড়ো শয়তান।  বহু ক্ষেত...