ইউক্রেইনের কিছু জায়গা থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনী পিছু হঠছে বলে খবর ।
যদিও এই পশ্চাদপসরণ সামগ্রিক যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা এই মুহুর্তে বলা মুশকিল।
ইউক্রেইনের তুলনায় রাশিয়ার সামরিক শক্তি অনেক বেশী । পৃথিবীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই সম্ভবত একমাত্র দেশ যা সামরিক ভাবে রাশিয়ার চেয়েও শক্তিশালী। রাশিয়ার কাছে এমন অনেক অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র আছে যা আমেরিকার কাছেও নেই।
তা সত্ত্বেও দীর্ঘ কয়েকমাস যুদ্ধ চালিয়েও রাশিয়া ইউক্রেইনের ২০-২৫ শতাংশের বেশী এলাকা দখল করতে পারেনি । তার মধ্যে অধিকাংশই রাশিয়ানভাষী অধ্যুষিত এলাকা। যেখানে গত কয়েক বছর ধরেই ইউক্রেইন থেকে স্বাধীন হওয়ার আন্দোলন চলছিল । ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে রাজধানী কিয়েভ অবধি গিয়েও রাশিয়ান বাহিনীকে পশ্চাদপসরণ করতে হয়েছে ।
ইউক্রেইনের ঘটনাবলী আবার একবার প্রমাণ করল যে কোনও দেশে যদি বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঘটে তাহলে সেদেশের জনগণ নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রাণপণে ঝাঁপিয়ে পড়বেন এবং নিজের দেশের সরকারের পক্ষেই থাকবেন । সে সরকার যদি দক্ষিণপন্থী, প্রতিক্রিয়াশীল হয়, তবুও বহিঃশত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরা দেশের সরকারের পক্ষেই থাকবেন ।
তাছাড়া বর্তমানে রাশিয়ার আশেপাশের নানা দেশের ওপর রাশিয়ার রাষ্ট্রের উগ্রজাতীয়তাবাদী, আধিপত্যকামী, আগ্রাসী মানসিকতার ভয়ও কাজ করেছে ইউক্রেইনিয়ানদের মধ্যে । কমরেড লেনিন এবং কমরেড স্তালিনের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে বিভিন্ন জাতি এবং জাতিসত্ত্বার আত্মনিয়ন্ত্রণের এবং বিচ্ছিন্ন হওয়ার যে অধিকার ছিল তা বর্তমান পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ায় প্রহসনে পরিণত হয়েছে । রাশিয়া এখন জাতিস্বত্ত্বার কারাগারে পরিণত হয়েছে । চেচনিয়া সহ অন্যান্য জায়গায় তা প্রমাণিত হয়েছে ।
ইউক্রেইনের এই যুদ্ধ রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে মার্কিন তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্রাজ্যবাদের এক সম্মুখ সমর। পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদীরা সরাসরি এই যুদ্ধে অংশ না নিলেও অস্ত্র, অর্থ ও কুটনৈতিক সমর্থন দিয়ে পুরোপুরি ইউক্রেইনের জেলেন্সকি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে ।
এবং এই সম্মুখ সমর প্রমাণ করে দিয়েছে যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সরাসরি লড়াই করার মত জায়গায় রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদ এই মুহুর্তে নেই ।
ভ্লাদিমির পুতিন নিজেকে একজন শক্তিশালী শাসক (স্ট্রংম্যান) হিসেবে দেখিয়ে শাসন করে এসেছেন । স্বভাবতই ইউক্রেইনে রাশিয়ার কার্যতঃ পরাজয় হলে তার আসনও টলোমলো হয়ে যাবে । ইতিমধ্যেই পুতিন সমর্থক ব্লগারদের মধ্যে অনেকে পুতিনের সমালোচনা করতে শুরু করেছে । সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার পুতিনের এক শক্তশালী অস্ত্র। তাই এই সমালোচনা তাৎপর্যপূর্ণ ।
এ কথাও অনেকদিন থেকেই শোনা যাচ্ছে যে বহির্বিশ্বে গুপ্তচরবৃত্তি চালানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা এসভিআর ইউক্রেইনে পুতিনের এই পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের শুরু থেকেই বিরোধিতা করেছিল। তাদের কথা না শুনেই পুতিন আগ্রাসন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন পুতিনের যুদ্ধের খারাপ ফলের কারণে পুতিনের দুর্বলতাকে ব্যবহার করে এসভিআর পুতিনকে সরাবার চেষ্টা যে করবে না, কে বলতে পারে ! রাশিয়ার রাজনীতিতে এইসব গুপ্তচর সংস্থাগুলির প্রভাব প্রবল। পুতিন নিজেও কেজিবি অফিসার ছিলেন ।
অন্যদিকে চীন খুব আগ্রহ সহকারে ইউক্রেইনের যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করছে। যদি রাশিয়া ইউক্রেইনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলত তবে চীনা সামাজিক সাম্রাজ্যবাদও তাইওয়ান সহ অন্যান্য দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক লড়াইয়ে নামার চেষ্টা করত হয়ত । তবে এখন সে সম্ভাবনা ক্ষীণ । এতদিন চীন ও আমেরিকার মধ্যে যে অর্থনৈতিক যুদ্ধ চলছিল সেটাই আপাতত চলবে বলে মনে হয়।
Comments
Post a Comment