'আজকাল অনেকেই বলে থাকেন যে ভারতবর্ষে নাকি পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটে গেছে। বর্তমান ভারতীয় সমাজ একটা পুঁজিবাদী সমাজ। ভারতের রাষ্ট্র একটা জাতীয় বুর্জোয়া রাষ্ট্র ।
এর সপক্ষে তাঁরা যুক্তি দেন যে আম্বানি,আদানি,টাটার মত ভারতীয় বৃহৎ বুর্জোয়ারা পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনীদের তালিকায় প্রথম সারিতে পৌঁছে গেছে। এরা ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দেশে অনেক বড়ো বড়ো কোম্পানি কিনছে।
যেমন টাটারা ২০০৭ সালে ইউরোপ তথা পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ইস্পাত প্রস্তুতকারক কোম্পানি কোরাসের মালিকানা নিজেদের দখলে নিয়েছিল।
এই উদাহরণ দিয়ে তো অনেকে আবার এটাও প্রমাণ করতে চান যে ভারতের বুর্জোয়ারা তথা ভারতের রাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র অবধি অর্জন করে ফেলেছে !!
তাঁরা বলেন, মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া বলে আসলে কিছু নেই ভারতে। কিছু মতান্ধ, বাস্তবজ্ঞানবর্জিত নকশাল নাকি সেকেলে মুৎসুদ্দি বুর্জোয়ার তত্ত্ব ধরে রেখেছে।
একথা যে কতখানি ভুল তা সাম্প্রতিক আদানি কান্ডে আবার প্রমাণিত হল।
আদানি বা এদের মত ভারতীয় বৃহৎ বুর্জোয়ারা মূলত নানা ধরনের জোচ্চুরি, জালিয়াতি, ফাটকা ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে।
এছাড়া নিয়মমাফিক পথে এদের কাছে যে পুঁজি আসে তার বেশ কিছুটা অংশই রাষ্ট্রের পুঁজি। সরকারী ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক সংস্থার কাছ থেকে আসা পুঁজি। যেমন আদানির বিভিন্ন কোম্পানিতে এলআইসি, স্টেট ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিপুল বিনিয়োগ আছে। সেই কারণেই আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম হুহু করে কমে যাওয়ায় এলআইসি এবং স্টেট ব্যাঙ্কের অর্থনৈতিক সুস্থিতি বিপদের মুখে পড়ে গেছে আর দেশের জনগণ প্রমাদ গুনছেন।
আবার আদানিকে এই বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে, বেইল-আউট করতে আদানি-বন্ধু নরেন্দ্র মোদীর সরকার হয়ত সরকারী কোষাগার থেকেই অর্থের যোগান দেবে।
এটাই তো আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের আদর্শ উদাহরণ ।
অন্যদিকে বেসরকারি যে পুঁজি এই সব বৃহৎ বুর্জোয়াদের হাতে আছে তার একটা বড়ো অংশই বিভিন্ন বিদেশী ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক, হেজ ফান্ড ইত্যাদির পুঁজি যারা নাকি আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির ধারক।
যেমন বার্কলেস, ডয়েশ ব্যাঙ্ক, স্ট্যানডার্ড চাটার্ড, জে. পি মরগ্যান, মেরিল লিঞ্চ, ক্রেডিট সুইসের মত বহু ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন কোম্পানিতে ব্যপক বিনিয়োগ করেছে।
অর্থাৎ যে টাকা দিয়ে এইসব ভারতীয় বুর্জোয়ারা ইউরোপ-আমেরিকায় নানা কোম্পানি কিনছে তা মূলত ইউরোপ-আমেরিকার লগ্নি পুঁজিপতিদেরই পুঁজি যা আন্তর্জাতিক অর্থনীতির জটিল সমীকরণে আদানি, আম্বানি, টাটার মত মুৎসুদ্দি বুর্জোয়াদের মাধ্যমে খাটছে।
এই সব দেশীয় বুর্জোয়াদের টিকি এবং দেশের অর্থনীতির ভাগ্য যে আসলে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজির কাছে বাঁধা আছে তা এ থেকেই প্রমাণ হয় যে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের মত একটা ছোট এবং অনামী শর্ট সেলিং কোম্পানির একটা রিপোর্টেই বিশ্বের তৃতীয় ধনী পুঁজিপতি আদানির সাধের সাম্রাজ্য লন্ডভন্ড হওয়া শুরু হয়ে গেছে।
ঠিক তেমনই মোদী-শাহের মত সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক দালালদের টিকিও বিদেশী প্রভুদের হাতে আছে। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের এক-দেড় বছর আগে কয়েকদিনের ব্যবধানে বিবিসির মোদীকে নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রকাশ আর আদানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট প্রকাশ কি নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার?
নাকি সাম্রাজ্যবাদীরা বুঝে গেছে যে প্রায় ৮-৯ বছরের বিজেপি শাসনে জনগণের ক্ষোভ এত বেড়ে গেছে যে বিজেপির মাধ্যমে আর ভারতে শাসন চালানো যাবে না। সেই কারণেই কি মোদী এবং বিজেপিকে ঝেড়ে ফেলে নতুন কোনও শাসককে আনতে চাইছে সাম্রাজ্যবাদীরা ?
ভারতবর্ষের বৃহৎ বুর্জোয়ারা যে আসলে মুৎসুদ্দি-আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া, তা নিয়ে অনেক বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণ আছে। অনেক গবেষণা, পুস্তক প্রকাশ ইত্যাদিও হয়েছে। তা নিয়ে এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধের ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনার অবকাশ নেই।
তাই শুধু সর্বশেষ 'আদানি কান্ড' বিশ্লেষণ করে দেখানোর চেষ্টা হল যে ভারতে বৃহৎ বুর্জোয়ারা প্রকৃত অর্থেই মুৎসুদ্দি-আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়া।
ভারতবর্ষ একটা আধা-ঔপনিবেশিক দেশ।
ন্যায্য দাবীতে আন্দোলনরত বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আক্রমণকে ধিক্কার
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আওয়ামী লীগের যে ভূমিকা ছিল, তার থেকে অনেক বেশী ভূমিকা ছিল পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি , পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি(এম-এল)'এর মত বিপ্লবী দলগুলোর । এমনকি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) প্রথমে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতা করলেও পরে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল । এইসব বিপ্লবী দলগুলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ লড়াই করেছিল । বরিশাল, পাবনা, যশোর সহ আরও নানা জায়গার যুদ্ধ তার প্রমাণ। এই কমিউনিস্ট বিপ্লবী সংগঠনগুলোর লড়াইয়ের ফলেই স্বাধীন, নয়াগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্ম হত। হয়ত কয়েক বছর দেরী হত। দক্ষিণ এশিয়ায় সাচ্চা কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনায় ভীত হয়েই সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, তার দালাল ভারতীয় সম্প্রসারণবাদকে ব্যবহার করে, আওয়ামী লীগকে সামনে রেখে পূর্ব বাংলার তথাকথিত এই 'স্বাধীনতা'র জন্ম দেয় । 'বাংলাদেশ' নামটার ও জন্ম হয় । আসলে বিপ্লবীরা স্বাধীন 'পূর্ব বাংলা' রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করেছিলেন। তার বদলে এল আধা-ঔপনিবেশিক বাংলাদেশ। তার পরেই এল মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে চর...
1st of all - your effort to select the topics is quite timely.
ReplyDeleteThough to prove or establish again the suitability of the topics we don't have ample financial proof there is a crying need to prove it for strstegic reason.
I well appreciate your effort.