Skip to main content

ইউক্রেনে যুদ্ধ ও রাশিয়ার ভবিষ্যৎ

ইউক্রেনে যুদ্ধে রাশিয়া যেভাবে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে তাতে পুতিন যদি কম-ক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে ফেলে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই । 
এই ধরনের উগ্র,  যুদ্ধবাজ নেতারা কোণঠাসা হয়ে গেলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। 
ইউক্রেনের যুদ্ধে হেরে গেলে সেটা পুতিনের জন্য শুধু যুদ্ধে পরাজয়ই হবে না,  নিজের দেশে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রশ্ন হয়ে যাবে। 
তাই পুতিন যে কোনও মূল্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ জিততে চাইবে।  আর সেটা না হলে অন্তত জেলেন্সকির  সাথে একটা সম্মানজনক রফায় আসতে চাইবে। যাতে দেশে জনগণের সামনে রাশিয়ান রাষ্ট্র এবং পুতিনের নেতৃত্বের দুর্বলতা প্রকট না হয়ে যায় । 
এমনিতেই দেশের ভিতরে পুতিনের বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ তৈরী হয়েছে বলে খবর ।  সাধারণ মানুষের মধ্যে তো বটেই।  এমনকি পুতিনের ঘনিষ্ঠ আমলা এবং সেনা-কর্তাদের মধ্যেও । বিরোধীদের ওপর নিয়মিত দমন-পীড়ন চলছে।  কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ থামানো যাচ্ছে না । 
ওদিকে, গুজব শোনা যাচ্ছে যে চীনে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি  হু জিনতাও-এর গোষ্ঠী বর্তমান রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং'কে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে।
এই গুজব যদি সঠিক হয়, যদি হু জিনতাও গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসে তাহলে শি জিনপিং-এর তুলনায় নরমপন্থী হু জিনতাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা ন্যাটোত প্রতি নরম মনোভাব নেবে।  এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পুতিনের অবস্থান আরও দুর্বল হবে । 
এইরকম পরিস্থিতিতে যদি রাশিয়ায় সংশোধনবাদী কমিউনিস্ট নামধারী পার্টির বদলে একটা  সাচ্চা বিপ্লবী, কমিউনিস্ট পার্টি  থাকত তাহলে আজ হয়ত ফ্যাসিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী পুতিন রাজত্বের বিরুদ্ধে সর্বহারার বিপ্লবের একটা সম্ভাবনা থাকত।  
যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে ১৯১৭ সালে বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে শ্রমিক শ্রেণী ক্ষমতা দখল করেছিল । 
কিন্তু বিষয়গত পরিস্থিতি অনুকূল থাকলেও রাশিয়ার কমিউনিস্ট নামধারী পার্টি যেভাবে পুতিনের লেজুরবৃত্তি করে তাতে বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয়  বিষয়ীগত শক্তি অনুপস্থিত। 
তাই পুতিন যদি  ক্ষমতা থেকে চলেও যায় তাহলে হয় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল কোনও তথাকথিত গণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা দখল করবে। 
না হলে পুতিনের মতই অন্য কোনও স্বৈরাচারী শাসক ক্ষমতায় আসবে।
আর তা না হলে পুতিন রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে থাকা তার বিরোধীদের সাথে আপোষ রফা করে, দুর্বল ভাবে হলেও, তার সন্ত্রাসবাদী একনায়কতন্ত্র চালিয়ে যাবে ।

Comments

Popular posts from this blog

ন্যায্য দাবীতে আন্দোলনরত বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আক্রমণকে ধিক্কার

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আওয়ামী লীগের যে ভূমিকা ছিল, তার থেকে অনেক বেশী ভূমিকা ছিল পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি , পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি(এম-এল)'এর মত বিপ্লবী দলগুলোর । এমনকি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম-এল) প্রথমে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতা করলেও পরে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল । এইসব বিপ্লবী দলগুলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ লড়াই করেছিল । বরিশাল, পাবনা, যশোর সহ আরও নানা জায়গার যুদ্ধ তার প্রমাণ।  এই কমিউনিস্ট বিপ্লবী সংগঠনগুলোর লড়াইয়ের ফলেই স্বাধীন, নয়াগণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্ম হত। হয়ত কয়েক বছর দেরী হত।   দক্ষিণ এশিয়ায় সাচ্চা কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনায় ভীত হয়েই সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, তার দালাল ভারতীয় সম্প্রসারণবাদকে ব্যবহার করে, আওয়ামী লীগকে সামনে রেখে পূর্ব বাংলার তথাকথিত এই 'স্বাধীনতা'র জন্ম দেয় । 'বাংলাদেশ' নামটার ও জন্ম হয় । আসলে বিপ্লবীরা  স্বাধীন 'পূর্ব বাংলা' রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করেছিলেন। তার বদলে এল আধা-ঔপনিবেশিক বাংলাদেশ।   তার পরেই এল মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে চর...

আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস দীর্ঘজীবী হোক

আজ আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস।  আজকের দিনে বহুক্ষেত্রেই উত্তর-আধুনিক দর্শন এবং তা থেকে উদ্ভুত আইডেন্টিটি পলিটিক্স নারী আন্দোলনের ওপর ব্যপক প্রভাব বিস্তার করেছে।  শ্রেণী সংগ্রাম তথা সর্বহারার বিপ্লবের সঙ্গেই যে নারী মুক্তি সংগ্রাম অঙ্গাঙ্গী ভাবে সম্পৃক্ত তা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।  বুর্জোয়া ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ তথা সুবিধাবাদকে প্রতিষ্ঠা করাই অনেক ক্ষেত্রে নারী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক তথাকথিত বা স্বঘোষিত বিপ্লবী নারী সংগঠন  বা ব্যক্তিও এই বিচ্যুতি থেকে মুক্ত হতে পারেননি।  নারী আন্দোলন মানে হলো নারী এবং পুরুষের দ্বন্দ্ব । এরকম হাস্যকর, ভ্রান্ত, অনৈতিহাসিক  চেতনাও অনেকের মধ্যে গেঁড়ে বসেছে।  এই রকম পরিস্থিতিতে কমরেড ক্লারা জেটকিনের জীবন ও শিক্ষাকে গভীরভাবে অনুধাবন করা অত্যন্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ।  কমিউনিস্টরা নারী মুক্তি আন্দোলন বলতে যা বোঝেন, তার সঙ্গে তথাকথিত নারীবাদ নামক বিভিন্ন ধারার আন্দোলনের মধ্যে যে শ্রেণীচরিত্রগত পার্থক্য আছে তা উপলব্ধি করতে হবে।  এমনকি 'সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ' বা 'মার্কসবাদী নারীবাদ...

ফ্যাসিস্ট বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলকে ছাড় দেওয়া যাবে না

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে-শহরে মানুষের মধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।  সিপিএম আমলের শেষদিকে সিপিএমের বিরুদ্ধে যেরকম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল,  অনেকটা সেরকমই।  অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ এবং বহু মধ্যবিত্ত মানুষ তৃণমূলের  দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সরাসরি শিকার হয়েছেন।  স্বভাবত, তৃণমূলকেই তাঁরা সবচেয়ে বড়ো শত্রু হিসেবে দেখছেন।  পশ্চিমবঙ্গে কোনওদিন বিজেপির শাসন ছিল না।  তাই আরএসএস-বিজেপির হিন্দুত্ব ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাস এই রাজ্যের মানুষ কখনও সামনাসামনি প্রত্যক্ষ করেননি।  তাই হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের ভয়ঙ্কর রূপ সম্বন্ধে তাদের সম্যক ধারণা ও উপলব্ধি নেই।  অধিকাংশ সাধারণ মানুষ সারাদিন নিজেদের রুটি-রুজির সন্ধানে ব্যাস্ত থাকেন। তাই টিভি বা খবরের কাগজ খুলে, উত্তর প্রদেশে বা গুজরাটে বিজেপি সরকার কী সন্ত্রাস চালাচ্ছে বা আদানি কী ভাবে দেশের সম্পদ লুঠ করছে, তা জানা বা বোঝার অবকাশ তাঁদের নেই।   তাঁদের চোখের সামনে বা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তাঁরা যা দেখছেন সেটাই তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড়ো :বাস্তব'।  আর সেই 'বাস্তবে' তৃণমূলই সবচেয়ে বড়ো শয়তান।  বহু ক্ষেত...