ডিসেম্বর মাসে ঠিক কী হবে কেউ বলতে পারছে না। তবে বিজেপি যে কিছু একটা গোলমাল করার চেষ্টা করবে এই নিয়ে সকলেই প্রায় নিশ্চিত ।
স্বয়ং মমতা ব্যানার্জি ক্যাবিনেট মিটিং-এ ডিসেম্বর নিয়ে মন্ত্রীদের সাবধান থাকতে বলেছেন বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
বিজেপি হয় মহারাষ্ট্রের মত এখানেও একজন একনাথ শিন্ডেকে খুঁজে বের করবে। টাকা দিয়ে তৃণমূলের বিধায়কদের একাংশকে কিনে রাজা সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করবে৷ ইতিমধ্যেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সেরকমই একটা ঈঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
অথবা উত্তরবঙ্গ এবং বিহারের পূর্বাঞ্চলের চারটি জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরী করবে। এরকম কথা মূলধারার মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ - অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছে । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্ভবত সেই লক্ষ্যেই কিছুদিন আগে বিহারের কিষানগঞ্জে গিয়ে বৈঠক করেছেন। রাজবংশীদের নেতা অনন্ত মহারাজও কয়েকদিন আগে কুচবিহার আলাদা রাজ্য হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ।
দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্ত এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের সঙ্গে সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের বৈঠকের পিছনেও এই কারণ আছে বলে অনেকে মনে করছেন ।
আরেকটা বিষয় হতে পারে । ঋণের দায়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে গেছে রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় কেন্দ্র যদি ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে সম্ভবত জানুয়ারি মাস থেকে রাজ্য সরকারি কর্মচারীরাও আর বেতন পাবেন না। শুভেন্দু অধিকারী নিজে প্রচার মাধ্যমের সামনে কেন্দ্র সরকারকে 'অনুরোধ' করেছেন, রাজ্য সরকারকে নতুন করে আর ঋণ না দিতে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গেলে কেন্দ্র সরকার পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে ৩৬৫ ধারা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে দিতে পারে ।
যাই হোক না কেন, হিন্দুত্ত্ব ফ্যাসিবাদী শক্তি যে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে, অভিনব উপায়ে আগ্রাসন চালানোর পরিকল্পনা করছে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।
সেটা হয়ত ডিসেম্বর মাসে না হয়ে আরও কয়েক মাস পরেও হতে পারে । ডিসেম্বর মাসের কথাটা হয়ত মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য বলছে।
তৃণমূলের লাগামহীন দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের কারণে এমনিতেই সাধারণ মানুষ তৃণমূলের ওপর প্রবল ভাবে ক্ষুব্ধ । তাই বিজেপি সংবিধান-বহির্ভূত পথে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে খুব বেশী স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ আসবে না ।
গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর আরএসএস-বিজেপি আবার এই রাজ্যে নির্বাচন বহির্ভূত পথ অবলম্বন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে । নির্বাচনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করা তো দূরের কথা, খুব বেশী দুর্বলও যে করা যায় না তা এ থেকেই প্রমাণ হল।
এই অবস্থায় এই রাজ্যের সমস্ত সাচ্চা বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদী আক্রমণের এই নতুন ঢেউয়ের মোকাবিলা করতে হবে ।
গত কয়েক বছরে তৈরী হওয়া বিভিন্ন ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগঠনকে আবার সক্রিয় করতে হবে। এই সকল সংগঠনকে, রাজ্য স্তরে, একটা ছাতার তলায়, একটা যুক্তফ্রন্ট সংগঠনের মধ্যে আনার চেষ্টা করতে হবে ।
পাড়ায় পাড়ায়, এলাকায় এলাকায় স্থানীয় ভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী কমিটি তৈরী করে জঙ্গি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে ।
সেই সঙ্গে লুম্পেন, দুর্নীতিগ্রস্থ শাসক শ্রেণীর দল তৃণমূলের বিরুদ্ধেও লড়াই জারি রাখতে হবে। না হলে হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াই ব্যপক জনগণের মধ্যে মান্যতা পাবে না ।
Comments
Post a Comment