অধিকাংশ বছরের মতো এবারও রাম নবমী আর রমজান মাস একই সময়ে পড়েছে।
এত বছর ধরে কোনও সমস্যা হয়নি।
তবে গত কয়েকবছর ধরেই সাম্প্রদায়িক শক্তি রাম নবমীকে কেন্দ্র করে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
এবারেও হাওড়ার একটা এলাকায় গতকাল সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়েছে বলে খবর।
তবে সাধারণ মানুষের সদিচ্ছার কারণে অন্যান্য জায়গায় সেই দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েনি।
সম্পত্তির কিছু ক্ষতি হলেও প্রাণহানি হয়নি, এটা ভালো খবর।
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে। A leopard never changes its spots.
অর্থাৎ একটা চিতাবাঘ কখনই তার গায়ের চাকা চাকা দাগ পরিত্যাগ করবে না।
তেমনই হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদী আরএসএস-বিজেপিও কখনও তার হিন্দু সাম্প্রদায়িক অ্যাজেন্ডা পরিত্যাগ করবে না।
২০২১ সালে সাম্প্রদায়িক অ্যাজেন্ডা নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে ভুত হয়ে গেল বিজেপি। মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা বড়ো অংশের মানুষও যে আরএসএস-বিজেপির উত্তর ভারতীয় হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের রাজনীতিকে ঘৃণা করেন, তা প্রমাণ হয়ে গেল।
তাও হিন্দুত্ব ফ্যাসিস্টরা আবার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরী করার চেষ্টা করছে। তাদের দোসর হিসেবে মুসলিম মৌলবাদীরা তো আছেই। দু'পক্ষই আসলে একই অ্যাজেন্ডা রূপায়িত করতে সক্রিয়।
আর তৃণমূলী রাজ্য সরকার, মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বললেও, কার্যক্ষেত্রে এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আটকাতে তেমন সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না।
কারণ বর্তমানে রাজ্যে একটা দাঙ্গা-হাঙ্গামার পরিবেশ তৈরী হলে তৃণমূল কংগ্রেসেরই সবচেয়ে বেশী লাভ হবে।
এমনকি বিজেপির থেকেও বেশী লাভ হবে।
সরকারী কর্মচারী-শিক্ষকদের আন্দোলন , যোগ্য কিন্তু বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন ইত্যাদি থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া যাবে।
তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি, সন্ত্রাসে তিতিবিরক্ত হয়ে সংখ্যালঘুদের একটা বড়ো অংশ সরে যাচ্ছেন । সাম্প্রদায়িকতার ভয় দেখিয়ে, তাদের মধ্যে অস্তিত্বের সংকট জাগিয়ে তুলে, তাদের আবার তৃণমূলকে ভোট দিতে বাধ্য করা যাবে।
আরও বহু বছরের জন্য রাজ্যজুড়ে 'দিদি ও ভাই'দের মৌরসীপাট্টা বজায় রাখা যাবে।
অতীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে, সক্রিয়ভাবে দাঙ্গা রোখার ক্ষেত্রে, বামপন্থী দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখা গিয়েছে। তবে এখন বিভিন্ন সংসদবাদী বাম দলও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আন্দোলন করায় তেমন সক্রিয় নয়। কারণ তৃণমূলকে যেনতেন প্রকারেণ ক্ষমতা থেকে সরানোই তাদের মূল লক্ষ্য। তাতে হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান হলেও তাদের কোনও সমস্যা নেই।
২০২১-এ ভোট ট্রান্সফারের মাধ্যমেই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
তাছাড়া এই সংসদীয় বামদের প্রতি মানুষের আস্থাও এখন তেমন নেই। ২২ লাখ টাকার গাড়ি চড়া 'সর্বহারার নেতা'কে কি আর সর্বহারা শ্রেণী তাদের নিজেদের লোক বলে মেনে নেবে!
আর সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যাদের যথেষ্ট সদিচ্ছা আছে সেই বিপ্লবী বাম শক্তি এখন এত দুর্বল যে তাদের পক্ষে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে তেমন প্রতিরোধ গড়ে তোলা কঠিন।
তাই সাধারণ মানুষকেই সক্রিয় হতে হবে।
এই মুহুর্তে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য শ্রমিক,কৃষক, মেহনতী মানুষকে সক্রিয় হতে হবে।
হিন্দু, মুসলিম সহ অন্যান্য সব ধর্মের মানুষের ঐক্য বজায় রাখা এখন মূল কর্তব্য।
Comments
Post a Comment